পবিত্র শবেবরাতের ফজিলত ও কথিত আহলে হাদিসদের মিথ্যাচার জবাব।




.
আসসালামু আলাইকুম
সম্মানিত মুসলিম সাথীবৃন্দ,
ইদানীং কালে শবে বরাত নিয়ে মানুষদের মাঝে বিভিন্ন ধরণের দ্বন্দ দেখা দিচ্ছে। আমরা যুগযুগ ধরে জেনে আসছি শবেবরাত এক ইবাদতের রাত,কিন্তু বর্তমানে তথাকথিত আহলে হাদিস ভাইয়েরা পুরোদমে এর অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে বসছে।
এদের দাবি হল শবেবরাত বলে কিছু নাই এবং এর যত দলিল আছে সব দুর্বল হাদিস দ্বারা প্রমানিত। আবার অনেকে এই নিয়ে বাড়াবাড়ি করে বিশুদ্ধ আমলের পরিবর্তে সুন্নাত বিরোধী রেওয়াজও অনুসরণ করছে।
আসুন দেখি শবেবরাতের অস্তিত্ব ও ফযিলত :
শবেবরাত হল এক ফযিলতের রাত এবিষয়ে হাদিসে সাহাবা রাঃ দের একটি জামাত দ্বারা বর্ণিত।
সে সকল সাহাবাগন হলেন :
ক) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ)
খ) হযরত আলী (রাঃ)
গ) হযরত আয়শা (রাঃ)
ঘ) হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ)
ঙ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর (রাঃ)
চ) হযরত আবু মুসা আশআরী (রাঃ)
ছ) হযরত আউফ ইবনু মালিক (রাঃ)
জ) হযরত মুআয ইবনু জাবাল (রাঃ)
ঝ) হযরত আবু ছালাবাহ আল খুসানী (রাঃ)
ঞ) কাছীর ইবনে মুররা আল হাজরমী (রাঃ)
যেসব কিতাবে এ বিষয়ে হাদিস বর্ণিত হয়েছে তার মাঝে সিহাহ সিত্তার দুটি গ্রন্থ-তিরমিজী ও ইবনে মাজাহ। এছাড়া সিহাহ সিত্তার বাইরেও অনেক ইমামগণ তাদের জগদ্বিখ্যাত বড় বড় হাদীসগ্রন্থে শবে বরাত ও তার ফজীলত নিয়ে হাদীস বর্ণনা করেছেন। যেমনঃ
১। ইমাম তাবরানী রচিত “আল কাবীর” এবং “আল আওসাত”
২। ইমাম ইবনে হিব্বান রচিত “সহীহ ইবনে হিব্বান”
৩। ইমাম বায়হাকী রচিত “শুআবুল ঈমান”
৪। হাফেয আবু নুআইম রচিত “হিলয়া”
৫। হাফেয হায়ছামী রচিত “মাজমাউয যাওয়ায়েদ”
৬। ইমাম বাযযার তাঁর “মুসনাদ” এ
৭। হাফিয যকী উদ্দীন আল মুনযিরী রচিত “আততারগীব ওয়াত-তারহীব”
৮। ইমাম আহমদ তাঁর “মুসনাদ” এ
৯। মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা
১০। হাফেয আব্দুর রাজ্জাক এর “মুসান্নাফ” এ।
এবং এছাড়া বুহু উলামায়ে কেরাম এর ফজিলত নিয়ে কিতাব রচনা ও মতামত দিয়েছেন।
সময়ের স্বল্পতার কারনে আপাততঃ একটি হাদিস উল্লেখ করা হল। আসা করছি কথিত আহলে হাদিস ভাইয়েরা এর দ্বারা নিজেদের ভ্রান্তি শুধরে নিবেন।
হযরত মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, আল্লাহ তা’আলা শা’বান মাসের পনের তারিখ রাতে সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করে সকলকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু মুশরিক এবং হিংসুক ছাড়া।
আলোচ্য হাদীসটি
১। ইমাম তাবরানী আল-কাবীরে এবং আল-আওসাতে
২। ইমাম ইবনে হিব্বান সহীহ ইবনে হিব্বানে
৩। ইমাম বায়হাকী শুআবুল ঈমানে
৪। হাফেয আবু নুআইম তার হিলয়া গ্রন্থে
৫। হাফেয হায়ছামী মাজমাউয যাওয়ায়েদে
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল রাঃ সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসটি সম্পর্কে হাফিজ ইবনে রজব হাম্বালী রহঃ সহীহ বলেছেন
(লাতাইফ আল-মারিফ ১/২২৪)
হযরত আয়শা (রাঃ) বলেন, এক রাতে আমি হুযুর (সঃ) কে বিছানাতে পেলাম না। তাই তাঁকে খোজ করার উদ্দেশ্যে বের হলাম। তখন দেখতে পেলাম তিনি জান্নাতুন বাকীতে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বলে উঠেন, তুমি কি এই আশংকা করছো যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসূল (সঃ) তোমার সাথে অবিচার করবে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি ধারণা করেছিলাম আপনি অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে তাশরীফ নিয়েছেন। হুযুর (সঃ) বললেন, শা’বানের পনের তারিখ রাতে মহান আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে তাশরীফ নেন এবং বনু কালব গোত্রের ভেড়া-বকরির পশমগুলোর চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে তিনি মাফ করে দেন।
উক্ত হাদীসটিঃ
১। ইমাম তিরমিযী তাঁর তিরমিযী শরীফে
২। ইমাম ইবনে মাজাহ তাঁর সুনানে
৩। ইমাম বায়হাকী তাঁর শুয়াবুল ঈমানে
৪। ইমাম ইবনে আবী শাইবাহ তাঁর মুসান্নাফে
৫। ইমাম বগবী তাঁর শরহেস সুন্নাহয়
৬। ইবনে আহমদ তাঁর মুসনাদে
সংকলন করেছেন।
এবার দেখি, আসুন কথিত আহলে হাদিসের ভাইরা যাকে ছাড়া এক পা এগোতে চাই না বা পারেনা , কথায় কথায় যার গবেষনা পেশ করেন, সেই তাদের ইমাম শায়েখ নাসিরুদ্দিন আলবানী সাহেবের অভিমত এর দিকে নজর দেই।
“হাদীসটি মূল মতনের (মূল বক্তব্য) দিক দিয়ে সহীহ। সাহাবায়ে কেরামের একটি বড় জামাআত থেকে বিভিন্ন সূত্রে হাদীসটি বর্ণিত। যা পরস্পরকে শক্তিশালী করে তোলে। যে সকল সাহাবী থেকে হাদীসটি বর্ণিত তাঁরা হচ্ছেন
ক) মুআ’য ইবনে জাবাল (রাঃ)
খ) আবু ছা’লাবাহ (রাঃ)
গ) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)
ঘ) আবু মূসা আশআরী (রাঃ)
ঙ) আবু হুরায়রা (রাঃ)
চ) আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ)

ছ) হযরত আয়েশা (রাঃ)। ”
( সিলসিলাতুল আহাদিসা সহীহাঃ খ-৩, পৃ-১৩৮ )
উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-
সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার দ্বারাও প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত “ইসলাহুল মাসাজিদ”গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, “শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে”সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া(ঘারতেড়া) স্বভাবের, আর তার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম।
( সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠা )
ব্যাস!
এর থেকে বেশি প্রমান আর লাগবে বলে আমরা মনে করিনা। কারণ আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা শবেবরাতের ফজিলত অস্বিকার করিনা আলহামদুলিল্লাহ। যারা করে অর্থাৎ কথিত আহলে হাদিসরা তাদের ইমামের মাজহাব উল্লেখ করলাম শবেবরাতের গ্রহণযোগ্যতা হিসাবে।
সেসব ভাইদের কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ রইলো ভাই উম্মাহর এই দুর্যোগে ফিতনামূলক ও মিথ্যাচারে সুসজ্জিত মতবাদকে ত্যাগ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শতে ফিরে আসুন।
শবেবারাতের করনীয় :
১। এদিন ফজিলতের উদ্দেশ্যে রোজা রাখা প্রমানিত
২। বেশি করে নফল ইবাদত করা- নামাজ অথবা কুরান তিলাওয়াত এবং জিকির আসগারের মাধ্যমে
৩। কবর জিয়ারত করা প্রমানিত আছে তবে বাধ্যতা মনে করা অনুচিত
৪। বিশেষ কোন আমলের পদ্ধতি খাশ করা প্রমানিত নই
৫। ইসলামে আতসবাজি করা অবৈধ। তাই যারা করে নিশ্চয় তারা অমুসলিমদের অনুকরণ করে, যার পরিনাম ভয়াবহ।
এছাড়া শবেবরাতে সুন্নাত মুতাবেক ইখলাসের সাথে ইবাদত যতটুকু সম্ভব ততটুকু করা। এ ছাড়া অবশিষ্ট অহেতুক কাজ যেমন - আতশবাজি,মোমবাতি
,বিশেষ কোন খাদ্য ইত্যাদিকে রসম মনে করা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর কারণ এ রাতটি শুধুমাত্র ইবাদতের জন্য। কোন রসম রেওয়াজের জন্য মোটেই না ।
আল্লাহ আমাদের প্রত্যেককে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভূক্ত করুন।আমীন,সুম্মা আমীন।

Comments