***
‘আশহাদুআন্না
মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ’ ﺍَﺷْﻬَﺪُ ﺍَﻥَّ
ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَّﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ উচ্চারণ করে,তখন স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়বা শাহাদাত আঙ্গুল চুম্বন করেচক্ষুদ্বয়ে লাগানো মুস্তাহাবএবং মুস্তাহসান এতে দ্বীন ওদুনিয়া উভয় জাহানের কল্যাণনিহিত রয়েছে।এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ শরীফবর্ণিত আছে ।সাহাবায়েকিরাম রদ্বিয়াল্লাহুতাআলা আনহুম আজমাইন উনাদেরথেকে এটা প্রমাণিত আছে এবংআহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতউনার অনুসারীগণ এই আমলকেমুস্তাহাব মনে করেপালন করেন।প্রসিদ্ধ “সালাতে মাস্উদী”কিতাবের দ্বিতীয় খন্ড ﻧﻤﺎﺯশীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারথেকে বর্ণিত আছে-“যে ব্যক্তি আযানে আমার নামমুবারক শুনে স্বীয়বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখের উপররাখে, আমি তাকেকিয়ামতেরকাতার সমূহে খোঁজকরবো এবং নিজের পিছে পিছেবেহেশতে নিয়ে যাব।”সুবহানাল্লা তাফসীরে রূহুল বয়ানে ষষ্ঠপারার সূরা মায়েদার আয়াত
ﻭَﺍِﺫَﺍ ﻧَﺎﺩَﻳْﺘُﻢْ ﺍِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻠﻮﺓِ ﺍﻻﻳ এরব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত
আছে-“মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলার
সময় নিজের শাহাদাতের আঙ্গুল
সহ বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু
দেয়ার বিধানটা জঈফ
রেওয়াতের সম্মত। কেননা
যদিও এ বিধানটা মরফু হাদীছদ্বারা প্রমাণিত নয়।কিন্তু মুহাদ্দিছীন কিরাম এব্যাপারে একমত যে আকর্ষণসৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারেরবেলায় জঈফ হাদীছ অনুযায়ীআমল করা জায়েয।ফাত্ওয়ায়ে শামীর প্রথম খন্ড
ﺍﻻﺫﺍﻥ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিতআছে-“আযানের প্রথম ﺍَﺷْﻬَﺪُ ﺍَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ
ﺭَّﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ বলার সময়- ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ (ছল্লাল্লাহু
আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলা মুস্তাহাব এবংদ্বিতীয় শাহাদত বলার সময়-
ﻗُﺮﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﺑِﻚَ ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ
(কুর্রাতু আইনী বিকা ইয়ারসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম ) বলবেন।অতঃপরনিজের
বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ স্বীয়চোখদ্বয়ের উপর রাখবেন এবং
বলবেন- ﺍﻟَﻠﻬُﻢَّ ﻣَﺘِّﻌْﻨِﻰْ ﺑِﺎﻟﺴَّﻤْﻊِ
ﻭَﺍﻟْﺒَﺼَﺮِ
(আল্লাহুম্মা মাত্তায়িনী
বিসসাময়ি ওয়াল বছরি)
এর ফলে নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাকে নিজের পিছনে
পিছনে বেহেশতে নিয়ে
যাবেন।
অনুরূপ কনযুল ইবাদ ও কুহস্থানী
গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়াতেও তদ্রুপ
উল্লেখিত আছে।
কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত
আছে-
“যে ব্যক্তি আযানে
‘আশহাদুআন্না
মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শুনে
স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ
চুম্বন করে, আমি তাকে আমার
পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাব
এবং ওকে বেহেশতের কাতারে
অন্তর্ভূক্তকরবো।”সুবাহানাল্লাহ
এর পরিপূর্ণ আলোচনা ‘বাহারুর
রায়েক’ এর টীকায় বর্ণিত
আছে।
উপরোক্ত ইবারতে ছয়টি
কিতাবের কথা উল্লেখ করা
হয়েছে। যেমন- শামী, কনযুল
ইবাদ, ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়া,
কিতাবুল ফিরদাউস, কুহস্থানী
এবং ‘বাহারুর রায়েক’ এর
টীকা।
ওই সব কিতাবে একে মুস্তাহাব
বলা হয়েছে।
ﻣﻘﺎﺻﺪ ﺣﺴﻨﻪ ﻓﻰ ﺍﻻﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺪﺋﺮﻩ
ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﻨﺔ নামক গ্রন্থে ইমাম
সাখাবী রাহমাতুল্লাহি
আলাইহিবর্ণনা করেছেন-
ইমাম দায়লমী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ‘ফিরদাউস’ কিতাবে
হযরত আবু বকর
সিদ্দীকরাদ্বিয়াল্লাহু আলা
আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
“মুয়াযযিনের কন্ঠ থেকে যখন
‘আশহাদু আন্না৷মুহাম্মদার
রসুলুল্লাহ‘ শোনা গেল, তখন
তিনি তাই বললেন এবং স্বীয়
শাহাদতের
আঙ্গুলদ্বয়ের ভিতরের ভাগ চুমু
দিলেন এবং
চক্ষুদ্বয়ে লাগালেন।
তা’দেখে নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ ফরমান,
“যে ব্যক্তি আমার এই
প্রিয়জনের মত করবে, তাঁর জন্য
আমার সুপারিশ
অপরিহার্য।”সুবহানাল্লাহ
এ হাদীছটি অবশ্য
বিশুদ্ধ হাদীছের পর্যায়ভুক্ত
নয়। উক্ত মাকাসেদে হাসনা
গ্রন্থে আবুল
আব্বাসের রহমাতুল্লাহি
আলাইহি রচিত মুজেযাত
গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে-
হযরত খিযির আলাইহিস সালাম
থেকে বর্ণিত আছে-
যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের কণ্ঠে
‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার
রসুলুল্লাহ’ শোনে যদি বলে-
ﻣَﺮْﺣَﻴًﺎﺑِﺤَﺐِﻳْﺒِﻰْ ﻭَﻗُﺮَّﺓِ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ
ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ (মারাহাবা
বি হাবীবী ওয়া কুররতি আইনী
মুহাম্দ ইবনে আবদুল্লাহ
আলাইহিস সালাম ) অতঃপর
স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়
চুম্বন করে চোখে লাগাবে,
তাহলে তার চোখ কখনও পীড়িত
হবে না।
উক্তগ্রন্থে আরোও বর্ণনা করা
হয়েছে-
হযরত মুহম্মদ ইবনে বাবা
নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা
করেছেন যে এক সময় জোরে
বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল।
তখন তাঁর চোখে একটি পাথরের
কনা পড়েছিল যা বের করতে
পারেনিএবং খুবই ব্যথা অনুভব
হচ্ছিল। যখন
তিনি মুয়াযযিনের কণ্ঠে
আশহাদু আন্না
মুহাম্মদাররসুলুল্লাহ শুনলেন,
তখন তিনি উপরোক্ত দুআটি পাঠ
করলেন এবং অনায়াসে চোখ
থেকে পাথর বের হয়ে গেল।
একই ‘মাকাসেদে হাসনা’গ্রন্থে হযরত শামস মুহম্মদইবনে সালেহ মদনী থেকেবর্ণিত আছে যে,তিনি ইমাম আমজদ (মিসরেরঅধিবাসী পূর্ববর্তী উলামায়েকিরামের অন্তর্ভূক্ত) কেবলতে শুনেছেন-যে ব্যক্তিআযানে নূরে মুজাসসাম ,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার নাম মুবারকশোনে স্বীয় শাহাদাত বৃদ্ধাঙ্গুলী একত্রিত করে-
ﻭَﻗَﺒَّﻠَﻬُﻤَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺢَ ﺑِﻬِﻤَﺎ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ
ﻳَﺮْ ﻣُﺪْ ﺍَﺑَﺪًﺍ উভয় আঙ্গুলকে চুম্বনকরে চোখে লাগাবে, কখনও তারচক্ষু পীড়িত হবে না।ইরাক- আযমের কতেক মাশায়েখবলেছেন যে, যিনি এ আমলকরবেন, তাঁর চোখ রোগাক্রান্তহবে না। ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻟِﻰْ ﻛُﻞّ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ
ﻣُﻨﺬُ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻪُ ﻟَﻢْ ﺗَﺮْﻣُﺪْ ﻋَﻴْﻨِﻰকিতাব রচয়িতা বলেছেন- যখনথেকে আমি এ আমল করেছি আমারচক্ষু পীড়িত হয়নি।কিছু অগ্রসরহয়ে উক্ত‘মকাসেদেহাসনা’গ্রন্থে আরও বর্ণিতহয়েছে-
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦِ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻭَﺍَﻧَﺎ ﻣُﻨْﺬُ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ
ﺍِﺳْﺘَﻌْﻤَﻠْﺘَﻪُ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺮْﻣُﺪْ ﻋَﻴْﻨِﻰْ
ﻭَﺍَﺭْﺟُﻮْﺍ ﺍَﻥَّ ﻋَﺎﻓِﻴَﺘَﻬُﻤَﺎ ﺗَﺪُﻭْﻡُ ﻭَﺍِﻧِّﻰْ
ﺍَﺳْﻠَﻢُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻤﻰ ﺍِﻧْﺸَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪُ
হযরত ইবনে সালেহ
রহমাতুল্লাহি আলাইহিবলেছেন- যখন আমি এ ব্যাপারে
জানলাম, তখন এর উপর আমলকরলাম।এরপর থেকে আমারচোখে পীড়িত হয়নি। আমি আশাকরি, ইনশাআল্লাহ এ আরাম সবসময় থাকবে এবং অন্ধত্ব মুক্ত
থাকবো।উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ করাহয়েছে যে,ইমাম হাসান আলাইহিস সালামউনার থেকে বর্ণিত আছে, যে
ব্যক্তি ‘আশহাদু আন্নামুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শোনে
যদি বলে এবং ﻣَﺮْﺣَﺒًﺎ ﺑِﺤَﺒِﻴْﺒِﻰْ
ﻭَﻗُﺮَّﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন
করে চোখে লাগাবে এবং বলবে
ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻢَ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣَﺪْ তাহলে কখনও
সে অন্ধ হবে না এবং কখনও
তার চক্ষু পীড়িত হবে না।
মোট কথা হলো ‘মাকাসেদে
হাসনা’ গ্রন্থে অনেক ইমাম
থেকে এ আমল প্রমাণিত করা
হয়েছে।
শরহে নেকায়ায় বর্ণিত আছে-
জানা দরকার যে মুস্তাহাব
হচ্ছে যিনি
দ্বিতীয় শাহাদতের প্রথম শব্দ
শোনে বলবেন;
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ
(ছল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এবং দ্বিতীয়
শব্দ শোনে বলবেন- ﻗُﺮَّﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﺑِﻚَ
ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ (কুররাতু আইনি
বিকা ইয়া রসুলাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ) এবং নিজের
বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুক্ষদ্বয়ে
রাখবেন, ওকে হুযূর
(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) নিজের পিছনে
পিছনে বেহেশতে নিয়ে
যাবেন।
অনুরূপ কনযুল ইবাদেও বর্ণিত
আছে। মাওলানা জামাল ইবনে
আবদুল্লাহ ইবনে উমর মক্কী
স্বীয় ফাত্ওয়ার কিতাবে
উল্লেখ করেছেন-
ﺗَﻘْﺒِﻴْﻞُ ﺍﻟْﺎِﺑﻬَﺎﻣَﻴْﻦِ ﻭَﻭَﺿْﻊُ ﻫُﻤَﺎ ﻋَﻠَﻰ
ﺍﻟْﻌَﻴْﻨَﻴْﻦِ ﻋِﻨْﺪَ ﺫِﻛْﺮِ ﺍﺳْﻤِﻪ ﻋَﻠَﻴﻪِ
ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﺎَﺫَﺍﻥِ ﺟَﺎﺋِﺮ ﺑَﻞْ
ﻣُﺴْﺘَﺤَﺐ ﺻَﺮَّﺡَ ﺑِﻪ ﻣَﺸَﺎﺋِﺨِﻨَﺎ
আযানে নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পবিত্র নাম
শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়া
এবং চোখে লাগানো জায়েয
বরং মুস্তাহাব। আমাদের
মাশায়েখে কিরাম এ ব্যাপারে
বিশদ বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা মুহম্মদ তাহির
রহমাতুল্লাহি আলাইহি ﺗﻜﻤﻠﺔ
ﻣﺠﻤﻊ ﺑﺨﺎﺭ ﺍﻻﻧﻮﺍﺭ
গ্রন্থে উপরোক্ত হাদীছকে
‘বিশুদ্ধ নয়’ মন্তব্য করে বলেন-
ﻭَﺭُﻭِﻯَ ﺗَﺠﺮِﺑَﺔ ﺫَﺍﻟِﻚَ ﻋَﻦْ ﻛَﺜِﻴْﺮِﻳْﻦَ
“(কিন্তু এ হাদীছ অনুযায়ী
আমলের বর্ণনা অনেক পাওয়া
যায়।)” আরও অনেক ইবারত
উদ্ধৃত করা যায়।
কিন্তু সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে
এটুকুই যথেষ্ট মনে করলাম।
হযরত সদরুল আফাযেল মাওলানা
সৈয়দ নঈম উদ্দীন সাহেব
কিবলা মুরাদাবাদী
বলেছেন, লন্ডন থেকে প্রকাশিত
‘ইনজিল’ গ্রন্থের একটি অনেক
পুরানো কপি পাওয়া গেছে,
যেটার নাম ‘ইনজিল
বারনাবাস’। ইদানীং এটা
ব্যাপকভাবে প্রকাশিত এবং
প্রত্যেক ভাষায় অনূদিত
হয়েছে।
এর অধিকাংশ বিধানাবলীর
সাথে ইসলামের বিধানাবলীর
মিল রয়েছে। এ গ্রন্থের এক
জায়গায় লিখা হয়েছে যে
হযরত আদম আলাইহিস সালাম
যখন রূহুল কুদ্দুস ( নূরে
মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) উনাকে দেখার জন্য
আরজু করলেন, তখন সেই নুর
উনার বৃদ্ধাঙ্গুলের
নখে চমকানো হলো। তিনি
মহব্বতের জোশে উক্ত
নখদ্বয়ে চুমু দিলেন এবং চোখে
লাগালেন। (রূহুল কুদ্দুসের
অর্থ নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম কেন করা হলো?
কারণ ঈসা আলাইহিস সালাম
উনার যুগে রূহুল কুদ্দুস
নামেই নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি মশহুর ছিলেন।
হানাফী আলিমগণ ছাড়াও
শাফেঈ ও মালেকী মাযহাবের
আলিমগণও বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়
চুম্বন মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে
একমত।
যেমন শাফেঈ মাযহাবের
প্রসিদ্ধ কিতাব – ﺍﻋﺎﻧﺔ ﺍﻟﻄﺎﻟﺒﻴﻦ
ﻋﻠﻰ ﺣﻞ ﺍﻟﻔﺎﻅ ﻓﺘﺢ ﺍﻟﻤﻤﻌﻴﻦ এর
২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
ﺛُﻢَّ ﻳُﻘَﺒِّﻞَ ﺍِﺑْﻬَﺎ ﻣَﻴْﻪِ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻫُﻤَﺎ
ﻋَﻠﻰ ﻋَﻠْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻢِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣُﺪْ
ﺍَﺑَﺪًﺍ
“(অতঃপর নিজের
বৃন্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিয়ে চোখে
লাগালে, কখনও অন্ধ হবে না
এবং কখনও চক্ষু
পীড়া হবে না।)”
মালেকী মযহাবের প্রসিদ্ধ
কিতাব- ﻛﻔﺎﻳﺔ ﺍﻟﻄﺎﻟﺐ ﺍﻟﺮﺑﺎﻧﻰ
ﻟﺮﺳﺎﻟﺔ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺯﻳﺪ ﺍﻟﻘﻴﺮﺩﺍﻧﻰ এর
প্রথম খন্ডের ১৬৯ পৃষ্ঠায় এ
প্রসঙ্গে অনেক কিছু বলার
পর লিখেছেন- ﺛُﻢَّ ﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﺍِﺑْﻬَﺎﻣَﻴْﻪِ
ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻫُﻤَﺎ ﻋَﻠﻰ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ ﻳَﻌﻢِ
ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣُﺪْ ﺍَﺑَﺪًﺍ “(অতঃপর
বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেবে এবং
চোখে লাগাবে, তাহলে কখনও
অন্ধ হবে না এবং কখনও চক্ষু
পীড়া হবে না।
এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা
শেখ আলী সাঈদী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ﻋﺪﻭﻯ নামক কিতাবের
১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
গ্রন্থকার বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনের
সময়ের কথা উল্লেখ করেনি।
অবশ্য শেখ আল্লামা মুফাসসির
নুরুদ্দীন খুরাসানী থেকে
বর্ণিত আছে, তিনি
কতেক লোককে আযানের সময়
লক্ষ্য করেছেন যে যখন তারা
মুয়ায্যিনের মুখে আশহাদু আন্না
মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ শুনলেন,
তখন নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলে
চুমুদিলেন এবং নখদ্বয়কে
চোখের পলকে এবং চোখের
কোণায় লাগালেন এবং কান
পর্যন্ত বুলিয়ে নিলেন।
শাহাদাতের সময় এ রকম
একবার একবার করলেন। আমি
ওদের একজনকে এ
প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম।
তখন তিনি বললেন
আমিবৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিতাম
কিন্তু মাঝখানে
ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন আমার
চক্ষু রোগ হয়। এর মধ্যেএক
রাতে আমি নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে
দেখলাম। নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা
করলেন- ‘আযানের
সময় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখে
লাগানো কেন ছেড়ে দিয়েছেন?
যদি আপনি চান, আপনার চোখ
পুনরায় ভালহোক, তাহলে আপনি
পুনরায় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়
চোখেলাগানো আরম্ভ করুন’। ঘুম
ভাঙ্গার পর আমি পুনরায় এ আমল
শুরু করে দিলাম এবং আরোগ্য
লাভ করলাম। আজ পর্যন্ত সেই
রোগে আর আক্রান্ত হইনি৷
সুবহানাল্লাহ
শাফীঈ ও মালেকী মযহাবের
ইমামগণ এটা মুস্তাহাব হওয়া
সস্পর্কে রায় দিয়েছেন।
প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক
মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে
করেছেন এবং আমলও করছেন।
এআমল নিম্নবর্ণিত ফায়দা গুলো
রয়েছেঃ
আমলকারীর চোখ রোগ থেকে
মুক্ত থাকবে, ইনশাআল্লাহ কখনও
অন্ধ হবে না, যে কোন চক্ষু
রোগীর জন্য বৃদ্ধাঙ্গুলী
চুম্বনের আমলটি হচ্ছে উৎকৃষ্ট
চিকিৎসা। এটা
অনেকবার পরীক্ষিত হয়েছে।
‘আশহাদুআন্না
মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ’ ﺍَﺷْﻬَﺪُ ﺍَﻥَّ
ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ ﺭَّﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ উচ্চারণ করে,তখন স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়বা শাহাদাত আঙ্গুল চুম্বন করেচক্ষুদ্বয়ে লাগানো মুস্তাহাবএবং মুস্তাহসান এতে দ্বীন ওদুনিয়া উভয় জাহানের কল্যাণনিহিত রয়েছে।এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ শরীফবর্ণিত আছে ।সাহাবায়েকিরাম রদ্বিয়াল্লাহুতাআলা আনহুম আজমাইন উনাদেরথেকে এটা প্রমাণিত আছে এবংআহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতউনার অনুসারীগণ এই আমলকেমুস্তাহাব মনে করেপালন করেন।প্রসিদ্ধ “সালাতে মাস্উদী”কিতাবের দ্বিতীয় খন্ড ﻧﻤﺎﺯশীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-নূরে মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহহুযূর পাক ছল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারথেকে বর্ণিত আছে-“যে ব্যক্তি আযানে আমার নামমুবারক শুনে স্বীয়বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখের উপররাখে, আমি তাকেকিয়ামতেরকাতার সমূহে খোঁজকরবো এবং নিজের পিছে পিছেবেহেশতে নিয়ে যাব।”সুবহানাল্লা তাফসীরে রূহুল বয়ানে ষষ্ঠপারার সূরা মায়েদার আয়াত
ﻭَﺍِﺫَﺍ ﻧَﺎﺩَﻳْﺘُﻢْ ﺍِﻟَﻰ ﺍﻟﺼَّﻠﻮﺓِ ﺍﻻﻳ এরব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত
আছে-“মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ’ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলার
সময় নিজের শাহাদাতের আঙ্গুল
সহ বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু
দেয়ার বিধানটা জঈফ
রেওয়াতের সম্মত। কেননা
যদিও এ বিধানটা মরফু হাদীছদ্বারা প্রমাণিত নয়।কিন্তু মুহাদ্দিছীন কিরাম এব্যাপারে একমত যে আকর্ষণসৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারেরবেলায় জঈফ হাদীছ অনুযায়ীআমল করা জায়েয।ফাত্ওয়ায়ে শামীর প্রথম খন্ড
ﺍﻻﺫﺍﻥ শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিতআছে-“আযানের প্রথম ﺍَﺷْﻬَﺪُ ﺍَﻥَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪًﺍ
ﺭَّﺳُﻮْﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ বলার সময়- ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ
ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ (ছল্লাল্লাহু
আলাইকা ইয়া রসুলাল্লাহছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলা মুস্তাহাব এবংদ্বিতীয় শাহাদত বলার সময়-
ﻗُﺮﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﺑِﻚَ ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ
(কুর্রাতু আইনী বিকা ইয়ারসুলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া সাল্লাম ) বলবেন।অতঃপরনিজের
বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ স্বীয়চোখদ্বয়ের উপর রাখবেন এবং
বলবেন- ﺍﻟَﻠﻬُﻢَّ ﻣَﺘِّﻌْﻨِﻰْ ﺑِﺎﻟﺴَّﻤْﻊِ
ﻭَﺍﻟْﺒَﺼَﺮِ
(আল্লাহুম্মা মাত্তায়িনী
বিসসাময়ি ওয়াল বছরি)
এর ফলে নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাকে নিজের পিছনে
পিছনে বেহেশতে নিয়ে
যাবেন।
অনুরূপ কনযুল ইবাদ ও কুহস্থানী
গ্রন্থে বর্ণিত আছে।
ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়াতেও তদ্রুপ
উল্লেখিত আছে।
কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত
আছে-
“যে ব্যক্তি আযানে
‘আশহাদুআন্না
মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শুনে
স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ
চুম্বন করে, আমি তাকে আমার
পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাব
এবং ওকে বেহেশতের কাতারে
অন্তর্ভূক্তকরবো।”সুবাহানাল্লাহ
এর পরিপূর্ণ আলোচনা ‘বাহারুর
রায়েক’ এর টীকায় বর্ণিত
আছে।
উপরোক্ত ইবারতে ছয়টি
কিতাবের কথা উল্লেখ করা
হয়েছে। যেমন- শামী, কনযুল
ইবাদ, ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়া,
কিতাবুল ফিরদাউস, কুহস্থানী
এবং ‘বাহারুর রায়েক’ এর
টীকা।
ওই সব কিতাবে একে মুস্তাহাব
বলা হয়েছে।
ﻣﻘﺎﺻﺪ ﺣﺴﻨﻪ ﻓﻰ ﺍﻻﺣﺎﺩﻳﺚ ﺍﻟﺪﺋﺮﻩ
ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺴﻨﺔ নামক গ্রন্থে ইমাম
সাখাবী রাহমাতুল্লাহি
আলাইহিবর্ণনা করেছেন-
ইমাম দায়লমী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ‘ফিরদাউস’ কিতাবে
হযরত আবু বকর
সিদ্দীকরাদ্বিয়াল্লাহু আলা
আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন যে,
“মুয়াযযিনের কন্ঠ থেকে যখন
‘আশহাদু আন্না৷মুহাম্মদার
রসুলুল্লাহ‘ শোনা গেল, তখন
তিনি তাই বললেন এবং স্বীয়
শাহাদতের
আঙ্গুলদ্বয়ের ভিতরের ভাগ চুমু
দিলেন এবং
চক্ষুদ্বয়ে লাগালেন।
তা’দেখে নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম তিনি ইরশাদ ফরমান,
“যে ব্যক্তি আমার এই
প্রিয়জনের মত করবে, তাঁর জন্য
আমার সুপারিশ
অপরিহার্য।”সুবহানাল্লাহ
এ হাদীছটি অবশ্য
বিশুদ্ধ হাদীছের পর্যায়ভুক্ত
নয়। উক্ত মাকাসেদে হাসনা
গ্রন্থে আবুল
আব্বাসের রহমাতুল্লাহি
আলাইহি রচিত মুজেযাত
গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে-
হযরত খিযির আলাইহিস সালাম
থেকে বর্ণিত আছে-
যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের কণ্ঠে
‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার
রসুলুল্লাহ’ শোনে যদি বলে-
ﻣَﺮْﺣَﻴًﺎﺑِﺤَﺐِﻳْﺒِﻰْ ﻭَﻗُﺮَّﺓِ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ
ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ (মারাহাবা
বি হাবীবী ওয়া কুররতি আইনী
মুহাম্দ ইবনে আবদুল্লাহ
আলাইহিস সালাম ) অতঃপর
স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়
চুম্বন করে চোখে লাগাবে,
তাহলে তার চোখ কখনও পীড়িত
হবে না।
উক্তগ্রন্থে আরোও বর্ণনা করা
হয়েছে-
হযরত মুহম্মদ ইবনে বাবা
নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা
করেছেন যে এক সময় জোরে
বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল।
তখন তাঁর চোখে একটি পাথরের
কনা পড়েছিল যা বের করতে
পারেনিএবং খুবই ব্যথা অনুভব
হচ্ছিল। যখন
তিনি মুয়াযযিনের কণ্ঠে
আশহাদু আন্না
মুহাম্মদাররসুলুল্লাহ শুনলেন,
তখন তিনি উপরোক্ত দুআটি পাঠ
করলেন এবং অনায়াসে চোখ
থেকে পাথর বের হয়ে গেল।
একই ‘মাকাসেদে হাসনা’গ্রন্থে হযরত শামস মুহম্মদইবনে সালেহ মদনী থেকেবর্ণিত আছে যে,তিনি ইমাম আমজদ (মিসরেরঅধিবাসী পূর্ববর্তী উলামায়েকিরামের অন্তর্ভূক্ত) কেবলতে শুনেছেন-যে ব্যক্তিআযানে নূরে মুজাসসাম ,হাবীবুল্লাহ হুযূর পাকছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উনার নাম মুবারকশোনে স্বীয় শাহাদাত বৃদ্ধাঙ্গুলী একত্রিত করে-
ﻭَﻗَﺒَّﻠَﻬُﻤَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺢَ ﺑِﻬِﻤَﺎ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ
ﻳَﺮْ ﻣُﺪْ ﺍَﺑَﺪًﺍ উভয় আঙ্গুলকে চুম্বনকরে চোখে লাগাবে, কখনও তারচক্ষু পীড়িত হবে না।ইরাক- আযমের কতেক মাশায়েখবলেছেন যে, যিনি এ আমলকরবেন, তাঁর চোখ রোগাক্রান্তহবে না। ﻭَﻗَﺎﻝَ ﻟِﻰْ ﻛُﻞّ ﻣِﻨْﻬُﻤَﺎ
ﻣُﻨﺬُ ﻓَﻌَﻠْﺘُﻪُ ﻟَﻢْ ﺗَﺮْﻣُﺪْ ﻋَﻴْﻨِﻰকিতাব রচয়িতা বলেছেন- যখনথেকে আমি এ আমল করেছি আমারচক্ষু পীড়িত হয়নি।কিছু অগ্রসরহয়ে উক্ত‘মকাসেদেহাসনা’গ্রন্থে আরও বর্ণিতহয়েছে-
ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺍﺑْﻦِ ﺻَﺎﻟِﺢٍ ﻭَﺍَﻧَﺎ ﻣُﻨْﺬُ ﺳَﻤِﻌْﺘُﻪُ
ﺍِﺳْﺘَﻌْﻤَﻠْﺘَﻪُ ﻓَﻠَﺎ ﺗَﺮْﻣُﺪْ ﻋَﻴْﻨِﻰْ
ﻭَﺍَﺭْﺟُﻮْﺍ ﺍَﻥَّ ﻋَﺎﻓِﻴَﺘَﻬُﻤَﺎ ﺗَﺪُﻭْﻡُ ﻭَﺍِﻧِّﻰْ
ﺍَﺳْﻠَﻢُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻤﻰ ﺍِﻧْﺸَﺎﺀَ ﺍﻟﻠﻪُ
হযরত ইবনে সালেহ
রহমাতুল্লাহি আলাইহিবলেছেন- যখন আমি এ ব্যাপারে
জানলাম, তখন এর উপর আমলকরলাম।এরপর থেকে আমারচোখে পীড়িত হয়নি। আমি আশাকরি, ইনশাআল্লাহ এ আরাম সবসময় থাকবে এবং অন্ধত্ব মুক্ত
থাকবো।উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ করাহয়েছে যে,ইমাম হাসান আলাইহিস সালামউনার থেকে বর্ণিত আছে, যে
ব্যক্তি ‘আশহাদু আন্নামুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শোনে
যদি বলে এবং ﻣَﺮْﺣَﺒًﺎ ﺑِﺤَﺒِﻴْﺒِﻰْ
ﻭَﻗُﺮَّﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﻣُﺤَﻤَّﺪِ ﺍﺑْﻦِ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠﻪِ
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ
নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন
করে চোখে লাগাবে এবং বলবে
ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻢَ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣَﺪْ তাহলে কখনও
সে অন্ধ হবে না এবং কখনও
তার চক্ষু পীড়িত হবে না।
মোট কথা হলো ‘মাকাসেদে
হাসনা’ গ্রন্থে অনেক ইমাম
থেকে এ আমল প্রমাণিত করা
হয়েছে।
শরহে নেকায়ায় বর্ণিত আছে-
জানা দরকার যে মুস্তাহাব
হচ্ছে যিনি
দ্বিতীয় শাহাদতের প্রথম শব্দ
শোনে বলবেন;
ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ
(ছল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া
রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) এবং দ্বিতীয়
শব্দ শোনে বলবেন- ﻗُﺮَّﺓُ ﻋَﻴْﻨِﻰْ ﺑِﻚَ
ﻳَﺎﺭَﺳُﻮْﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ (কুররাতু আইনি
বিকা ইয়া রসুলাল্লাহ
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম ) এবং নিজের
বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুক্ষদ্বয়ে
রাখবেন, ওকে হুযূর
(ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) নিজের পিছনে
পিছনে বেহেশতে নিয়ে
যাবেন।
অনুরূপ কনযুল ইবাদেও বর্ণিত
আছে। মাওলানা জামাল ইবনে
আবদুল্লাহ ইবনে উমর মক্কী
স্বীয় ফাত্ওয়ার কিতাবে
উল্লেখ করেছেন-
ﺗَﻘْﺒِﻴْﻞُ ﺍﻟْﺎِﺑﻬَﺎﻣَﻴْﻦِ ﻭَﻭَﺿْﻊُ ﻫُﻤَﺎ ﻋَﻠَﻰ
ﺍﻟْﻌَﻴْﻨَﻴْﻦِ ﻋِﻨْﺪَ ﺫِﻛْﺮِ ﺍﺳْﻤِﻪ ﻋَﻠَﻴﻪِ
ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﺎَﺫَﺍﻥِ ﺟَﺎﺋِﺮ ﺑَﻞْ
ﻣُﺴْﺘَﺤَﺐ ﺻَﺮَّﺡَ ﺑِﻪ ﻣَﺸَﺎﺋِﺨِﻨَﺎ
আযানে নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম উনার পবিত্র নাম
শুনে বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেয়া
এবং চোখে লাগানো জায়েয
বরং মুস্তাহাব। আমাদের
মাশায়েখে কিরাম এ ব্যাপারে
বিশদ বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা মুহম্মদ তাহির
রহমাতুল্লাহি আলাইহি ﺗﻜﻤﻠﺔ
ﻣﺠﻤﻊ ﺑﺨﺎﺭ ﺍﻻﻧﻮﺍﺭ
গ্রন্থে উপরোক্ত হাদীছকে
‘বিশুদ্ধ নয়’ মন্তব্য করে বলেন-
ﻭَﺭُﻭِﻯَ ﺗَﺠﺮِﺑَﺔ ﺫَﺍﻟِﻚَ ﻋَﻦْ ﻛَﺜِﻴْﺮِﻳْﻦَ
“(কিন্তু এ হাদীছ অনুযায়ী
আমলের বর্ণনা অনেক পাওয়া
যায়।)” আরও অনেক ইবারত
উদ্ধৃত করা যায়।
কিন্তু সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে
এটুকুই যথেষ্ট মনে করলাম।
হযরত সদরুল আফাযেল মাওলানা
সৈয়দ নঈম উদ্দীন সাহেব
কিবলা মুরাদাবাদী
বলেছেন, লন্ডন থেকে প্রকাশিত
‘ইনজিল’ গ্রন্থের একটি অনেক
পুরানো কপি পাওয়া গেছে,
যেটার নাম ‘ইনজিল
বারনাবাস’। ইদানীং এটা
ব্যাপকভাবে প্রকাশিত এবং
প্রত্যেক ভাষায় অনূদিত
হয়েছে।
এর অধিকাংশ বিধানাবলীর
সাথে ইসলামের বিধানাবলীর
মিল রয়েছে। এ গ্রন্থের এক
জায়গায় লিখা হয়েছে যে
হযরত আদম আলাইহিস সালাম
যখন রূহুল কুদ্দুস ( নূরে
মুজাসসাম , হাবীবুল্লাহ হুযূর
পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) উনাকে দেখার জন্য
আরজু করলেন, তখন সেই নুর
উনার বৃদ্ধাঙ্গুলের
নখে চমকানো হলো। তিনি
মহব্বতের জোশে উক্ত
নখদ্বয়ে চুমু দিলেন এবং চোখে
লাগালেন। (রূহুল কুদ্দুসের
অর্থ নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম কেন করা হলো?
কারণ ঈসা আলাইহিস সালাম
উনার যুগে রূহুল কুদ্দুস
নামেই নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তিনি মশহুর ছিলেন।
হানাফী আলিমগণ ছাড়াও
শাফেঈ ও মালেকী মাযহাবের
আলিমগণও বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়
চুম্বন মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে
একমত।
যেমন শাফেঈ মাযহাবের
প্রসিদ্ধ কিতাব – ﺍﻋﺎﻧﺔ ﺍﻟﻄﺎﻟﺒﻴﻦ
ﻋﻠﻰ ﺣﻞ ﺍﻟﻔﺎﻅ ﻓﺘﺢ ﺍﻟﻤﻤﻌﻴﻦ এর
২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে-
ﺛُﻢَّ ﻳُﻘَﺒِّﻞَ ﺍِﺑْﻬَﺎ ﻣَﻴْﻪِ ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻫُﻤَﺎ
ﻋَﻠﻰ ﻋَﻠْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ ﻳَﻌْﻢِ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣُﺪْ
ﺍَﺑَﺪًﺍ
“(অতঃপর নিজের
বৃন্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিয়ে চোখে
লাগালে, কখনও অন্ধ হবে না
এবং কখনও চক্ষু
পীড়া হবে না।)”
মালেকী মযহাবের প্রসিদ্ধ
কিতাব- ﻛﻔﺎﻳﺔ ﺍﻟﻄﺎﻟﺐ ﺍﻟﺮﺑﺎﻧﻰ
ﻟﺮﺳﺎﻟﺔ ﺍﺑﻦ ﺍﺑﻰ ﺯﻳﺪ ﺍﻟﻘﻴﺮﺩﺍﻧﻰ এর
প্রথম খন্ডের ১৬৯ পৃষ্ঠায় এ
প্রসঙ্গে অনেক কিছু বলার
পর লিখেছেন- ﺛُﻢَّ ﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﺍِﺑْﻬَﺎﻣَﻴْﻪِ
ﻭَﻳَﺠْﻌَﻞُ ﻫُﻤَﺎ ﻋَﻠﻰ ﻋَﻴْﻨَﻴْﻪِ ﻟَﻢْ ﻳَﻌﻢِ
ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﻣُﺪْ ﺍَﺑَﺪًﺍ “(অতঃপর
বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দেবে এবং
চোখে লাগাবে, তাহলে কখনও
অন্ধ হবে না এবং কখনও চক্ষু
পীড়া হবে না।
এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আল্লামা
শেখ আলী সাঈদী রহমাতুল্লাহি
আলাইহি ﻋﺪﻭﻯ নামক কিতাবের
১৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন-
গ্রন্থকার বৃদ্ধাঙ্গুলী চুম্বনের
সময়ের কথা উল্লেখ করেনি।
অবশ্য শেখ আল্লামা মুফাসসির
নুরুদ্দীন খুরাসানী থেকে
বর্ণিত আছে, তিনি
কতেক লোককে আযানের সময়
লক্ষ্য করেছেন যে যখন তারা
মুয়ায্যিনের মুখে আশহাদু আন্না
মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ শুনলেন,
তখন নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুলে
চুমুদিলেন এবং নখদ্বয়কে
চোখের পলকে এবং চোখের
কোণায় লাগালেন এবং কান
পর্যন্ত বুলিয়ে নিলেন।
শাহাদাতের সময় এ রকম
একবার একবার করলেন। আমি
ওদের একজনকে এ
প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলাম।
তখন তিনি বললেন
আমিবৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুমু দিতাম
কিন্তু মাঝখানে
ছেড়ে দিয়েছিলাম। তখন আমার
চক্ষু রোগ হয়। এর মধ্যেএক
রাতে আমি নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহিওয়া
সাল্লাম উনাকে স্বপ্নে
দেখলাম। নূরে মুজাসসাম ,
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা
করলেন- ‘আযানের
সময় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখে
লাগানো কেন ছেড়ে দিয়েছেন?
যদি আপনি চান, আপনার চোখ
পুনরায় ভালহোক, তাহলে আপনি
পুনরায় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়
চোখেলাগানো আরম্ভ করুন’। ঘুম
ভাঙ্গার পর আমি পুনরায় এ আমল
শুরু করে দিলাম এবং আরোগ্য
লাভ করলাম। আজ পর্যন্ত সেই
রোগে আর আক্রান্ত হইনি৷
সুবহানাল্লাহ
শাফীঈ ও মালেকী মযহাবের
ইমামগণ এটা মুস্তাহাব হওয়া
সস্পর্কে রায় দিয়েছেন।
প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক
মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে
করেছেন এবং আমলও করছেন।
এআমল নিম্নবর্ণিত ফায়দা গুলো
রয়েছেঃ
আমলকারীর চোখ রোগ থেকে
মুক্ত থাকবে, ইনশাআল্লাহ কখনও
অন্ধ হবে না, যে কোন চক্ষু
রোগীর জন্য বৃদ্ধাঙ্গুলী
চুম্বনের আমলটি হচ্ছে উৎকৃষ্ট
চিকিৎসা। এটা
অনেকবার পরীক্ষিত হয়েছে।
Comments
Post a Comment